জনগণ কোন আশায় বিএনপিকে ভোট দেবে
আলোরকোল ডেস্ক।।
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ কোন আশায় তাদের ভোট দেবে? তিনি বলেন, ‘একটা দল কিভাবে জিতবে? তাদের নেতৃত্ব কোথায়? একজন এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একজন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাসহ নানা অপরাধ করে দেশান্তরি, সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন কমিশন (ইসি) সার্চ কমিটির মাধ্যমেই গঠন করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খুবই সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি করবেন। তার মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। এভাবেই হবে।’
গতকাল সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন,জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের পর এ সম্পর্কিত তথ্য জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন প্রান্ত এবং সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্ত থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রায় দুই ঘণ্টা ১৮ মিনিট নানা বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা, সরকারের বহুল আলোচিত আশ্রয়ণ প্রকল্প, নিউ ইয়র্কে বিমানের ফ্লাইট চালুর সম্ভাবনা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময়ে সেনাবাহিনীতে সংঘটিত হত্যার বিচার, আফগানিস্তানে তালেবানের উত্থান, কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানসম্পন্ন গবেষণার প্রয়োজনীয়তা, যুবকের মতো প্রতিষ্ঠানে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরতসহ সমসাময়িক আরো নানা বিষয়ে কথা বলেন।
বিএনপির সমালোচনা
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন নিয়ে যে প্রশ্ন তোলে, এই দলটির জন্ম কিভাবে? এই দলটি কি কোনো নির্বাচিত নেতৃত্ব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বা এমন কোনো নেতা যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা নিয়ে কোনো আন্দোলন করেছে বা কিছু করেছে? সুবিধাবাদী ও বলতে গেলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে গড়া একটি সংগঠন।’ তিনি বলেন, ‘এরা বলতে গেলে সব সময় পরভাতে পালিত। এখন সেই জায়গাটা তাদের আর নেই। এজেন্সিগুলোর সুবিধা নিয়ে তাদের তৈরি করা হয়েছিল। যেহেতু বিএনপি ক্ষমতায় নেই, সে কারণে এজেন্সিগুলোতে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেই বা তাদের ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না।’
প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাৎকারীদের শাস্তি হবে
যুবক ও ডেসটিনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগকারী সাধারণ মানুষের অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের যা যা করার তা করেছে। সাংবাদিকদের তো শ্যেনদৃষ্টি থাকে সমাজের ওপরে। এ রকম হায় হায় কম্পানি যখন সৃষ্টি হয়, আপনারা যদি এটা শুরুতে ধরিয়ে দিতেন যে এই কম্পানিগুলো হায় হায় কম্পানি। মানুষকে যদি একটু সচেতন করে দেন, সেটাও কিন্তু আপনাদের দায়িত্ব আছে।’ তিনি বলেন, মানুষের দুঃসময়ের সুযোগ নিয়ে কিছু মানুষ টাকা বানানোর জন্য যে প্রতারণা করে, এটার উপযুক্ত শাস্তি অবশ্যই হবে। সবাইকে কিন্তু ধরা হয়েছে। তারা টাকাগুলো কোথায় রাখল, কিভাবে রাখল, এগুলো কিন্তু বের করা হবে। সেগুলো যেন বিনিয়োগকারীদের হাতে পৌঁছানো যায়, সে চেষ্টা করা হবে।
কোনো কোনো সংস্থার জন্য শরণার্থী পালাটাই একটা ব্যবসা
বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নারীপাচার, শিশুপাচার থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে বড় কথা, তারা মাদকপাচারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, যেটা আমাদের জন্য সব থেকে আশঙ্কাজনক। আমরা তো প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছি; কিন্তু তাদের থামানো যাচ্ছে না। এটা আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলেছি। কিন্তু খুব বেশি সাড়া যে পাওয়া যাচ্ছে, তা নয়। মনে হয়, শরণার্থী পালতে পারলে…শরণার্থী পালাটাই একটা ব্যবসা। আমি দুঃখিত কিন্তু বলতে হচ্ছে। মনে হয়, শরণার্থী পালাটাই একটা ব্যবসা, কারো কারো জন্য, কোনো কোনো সংস্থার জন্য। এটা না থাকলে তাদের চাকরি থাকবে না। আমি তো খোলাখুলি বললাম। এটা কিন্তু কেউ বলবে না।’
রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা এখানে রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করার বিষয়টা যত বেশি দেখে, প্রত্যাবাসনের দিকে তত নজর দেয় না। অনেক প্রস্তাব আমরা পাই—এটা করা হোক, ওটা করা হোক। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বলি—করেন, মিয়ানমারে করেন। আমার এখানে করার তো দরকার নেই। ওদের নিয়ে যান। এখানে যেটুকু করার আমরা করি।’
সেনাবাহিনীতে হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া উচিত
বিমানবাহিনীতে হত্যার অভিযোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিচারের দাবি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে যেহেতু দাবি উঠেছে, এ বিষয়ে একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।’ তিনি বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশে বারবার ক্যু হয়েছে। শুধু এয়ারফোর্সের অফিসার নয়, সেনাবাহিনীর সৈনিক, কর্মচারী বহুজনকে হত্যা করা হয়েছে। আপনারা যদি জেলখানায় খোঁজ করেন, কোন জেলে কতজনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, তাহলে দেখবেন—হাজার হাজার। এরা যে গুম হয়ে গেল, হারিয়ে গেল সেটার কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। এটা একটা আশার কথা যে এত দিন পর সবার এই চেতনাটা এসেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এতকাল কেন সবাই নীরব ছিল।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তার ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। এটা তো জানা কথা। আওয়ামী লীগসহ অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু তাকে এমন একটা ফেরেশতা বানিয়ে দেওয়া হয়ে গেল যে শেষমেশ স্বাধীনতার ঘোষকও বানিয়ে দেওয়া হলো।’
যুক্তরাজ্যে টিউলিপের ওপর হামলা একটা জঘন্য কাজ
প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর যুক্তরাজ্যে হামলার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড একটা সভ্য দেশ। সেখানে এ ধরনের অসভ্য ঘটনা ঘটে। এটা দুঃখজনক ও জঘন্য একটা কাজ। এ ব্যাপারে আর কী বলতে পারি। আর ওখানে তো কিছু লোক আছেই সারাক্ষণ বিরুদ্ধে লেগে থাকে। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। ব্রিটিশ সরকার আছে, তারা দেখবে, তদন্ত করবে, যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’
সাংবাদিকদের দেওয়া চেক প্রসঙ্গ
করোনার সময়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গত মে মাসে যে চেক দেওয়া হয়েছে, সেটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসেবে এখনো জমা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে। প্রতিবছরই কিন্তু সাংবাদিকদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এখন এই টাকার চেক, কার চেক কোথায় চলে গেছে, কার কাছে গেছে…আমি জানি না, এখানে কে জবাব দিতে পারবে।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তব্যে তাঁর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের নানা তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ।