প্রধান মেনু

উপকূলের অনুসন্ধানী খবর লিখে দ্বিতীয়বারের মতো

‘পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম পুরস্কার’ পেলেন সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু

আলোরকোল ডেস্ক ।।

উপকূলের খবর লিখে এবার দ্বিতীয়বারের মতো ‘পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম পুরস্কার ২০১৮’ জিতলেন উপকূল-অনুসন্ধানী সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু।

শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজপোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এ প্রকাশিত ‘ডিজিটাল উপকূল’ শিরোনামে আট পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের জন্য অনলাইন সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে তিনি এ পুরস্কার পেলেন। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি এ পুরস্কার অর্জন করেছেন।

প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) ও এটুআই যৌথভাবে ২০১৫ সাল থেকে এ পুরস্কার দিচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

বুধবার  (২২ মে ) সকালে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোডে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সেমিনার কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক ও এটুআই-এর পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে সভা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন পিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও দৈনিক জাগরণ সম্পাদক আবেদ খান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পিআইবির মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য শ্যামল দত্ত।

এবার ৭টি ক্যাটাগরিতে পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম পুরস্কার দেওয়া হয়। পিআইবি গঠিত বিচারকমণ্ডলীর মূল্যায়নে পুরস্কারের জন্য বিজয়ী ৭ জনের নাম চূড়ান্ত হয়। বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরা হলেন- জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র (বাংলা) ক্যাটাগরিতে মো. ওয়ালীউল্লাহ (দৈনিক শেয়ারবিজ), জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্র (ইংরেজি) ক্যাটাগরিতে ইব্রাহিম হোসাইন (ঢাকা ট্রিবিউন), আঞ্চলিক সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে উজ্জ্বল বিশ্বাস (দৈনিক গ্রামের কাগজ, যশোর), টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে বুদ্ধদেব কুন্ডু (বৈশাখী টেলিভিশন), বেতার ক্যাটাগরিতে মোস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ বেতার), অনলাইন সংবাদপত্র ক্যাটাগরিতে রফিকুল ইসলাম মন্টু (রাইজিংবিডি ডটকম) এবং ফটোগ্রাফি ক্যাটাগরিতে সৈয়দ জাকির হোসেন (ঢাকা ট্রিবিউন)।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রত্যেক বিজয়ীর হাতে ৭৫ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তুলে দেন।

পুরস্কার পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় রফিকুল ইসলাম মন্টু বলেন, যেকোনো পুরস্কার কাজে উৎসাহ যোগাতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কাজের দায়িত্ব অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। আমার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। এই পুরস্কার উপকূল নিয়ে আরো নিবিড়ভাবে কাজ করতে আমাকে অনুপ্রাণিত করছে। আগামীতে আরো ভালো প্রতিবেদন লিখতে পারবো বলে আশা রাখি।

দ্বিতীয়বারের মতো পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম মন্টু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল ঘুরে ভিন্নধারার সাংবাদিকতা করছেন। পূর্বে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমে শ্যামনগর পর্যন্ত দীর্ঘ উপকূলীয় তটরেখার নানান বিষয় উঠে আসছে তার প্রতিবেদনে। তার প্রতিবেদনের বিষয় হয়ে উঠে আসছে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ-প্রতিবেশ, মানুষের জীবনযাত্রা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, নারী-শিশু, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সরকারি বেসরকারি সেবা পরিস্থিতি ইত্যাদি নানান কিছু।

উপকূল নিয়ে ভিন্নধারার রিপোর্টিং : বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উপকূল নিয়ে নিবিড়ভাবে ব্যতিক্রম ধারার রিপোর্টিং শুরু করেন রফিকুল ইসলাম মন্টু। সমুদ্র উপকূলবর্তী দুর্গম জনপদ ঘুরে তার এই রিপোর্টিংয়ের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে- প্রত্যন্ত অঞ্চলের তথ্য নীতিনির্ধারক মহলে পৌঁছে দেওয়া। অবহেলায় ডুবে থাকা পশ্চাদপদ উপকূলের চর, দ্বীপ, বিচ্ছিন্ন গ্রাম আর প্রত্যন্ত জনপদের সব খবর উঠে আসছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। বিচ্ছিন্ন জনপদের সব তরতাজা খবর পাঠককে জানাতে রফিকুল ইসলাম মন্টু অধিকাংশ সময়ই উপকূলীয় জনপদে অবস্থান করে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। সমগ্র উপকূলের অধিকাংশ এলাকা ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি। উপকূলীয় ১৯ জেলার মধ্যে ১৬টি জেলায় সংবাদের জন্য নিয়মিত সরেজমিন ঘুরছেন তিনি। তৈরি করেছেন অসংখ্য প্রতিবেদন। এ কাজে তাকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখিও হতে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সে সব উৎরে খবরের মূলে গিয়ে তুলে ধরেছেন সবহারা প্রান্তিক মানুষের অসহায়ত্বকে। খবরের সন্ধানে গিয়ে নিজেই কখনো কখনো নিচ্ছেন জীবনের ঝুঁকি। তার এই কাজের ফলে এরই মধ্যে উপকূলের রিপোর্টগুলো সংবাদ মাধ্যমের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যদিয়ে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধানের পথ সুগম হচ্ছে।

পুরস্কার : কাজের স্বীকৃতি হিসাবে এর আগে বেশকিছু পুরস্কার পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম মন্টু। ২০১৪, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে তিনবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বেস্ট রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন তিনি। ২০১৫ সালে পান পিআইবি-এটুআই গণমাধ্যম অ্যাওয়ার্ড। ২০১৫ এবং ২০০৬ সালে শিশুদের নিয়ে প্রতিবেদন লিখে অর্জন করেন ইউনিসেফ-মীনা অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৮ সালে পটুয়াখালীর চরাঞ্চলের সরেজমিন সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কার’ পান। ২০০০ সালে বরগুনার প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘এফপিএবি পুরস্কার’ পান। ২০০১ সালে ভোলার শিশুদের নিয়ে ফিচারের জন্য ‘পিআইবি-ইউনিসেফ ফিচার পুরস্কার’। ২০০৬ সালে অর্জন করেন দক্ষিণাঞ্চলের নদী ভাঙনের ওপর সিরিজ প্রতিবেদনের জন্য ‘ইউএনডিপি-বাংলাদেশ সরকার পুরস্কার’। ২০১০ সালে জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্ন উপকূল বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য ‘কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ড’। ১৯৮৮ সালে বরগুনা জেলা পর্যায়ে ‘একুশে সাহিত্য পুরস্কার’ এবং একই বছর স্থানীয় সাংবাদিকতায় ‘জাতীয় তরুণ সংঘ পুরস্কার’ অর্জন করেন তিনি।

প্রকাশনা : উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’-এর ওপর তথ্যভিত্তিক বই ‘সিডর: বিপন্ন জনপদের বিবর্ণ রূপ’ লিখেছেন তিনি। এটি প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে। ‘পটুয়াখালীর চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা ও মানবাধিকার’ শীর্ষক বই প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে। এটি চারণ সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রতিবেদন সংকলন।

গবেষণা : রফিকুল ইসলাম মন্টু ২০১০ সালে ‘উপকূলীয় অঞ্চলে সিডর আক্রান্ত জনগনের জীবন সুরক্ষায় কৌশল উদ্ভাবন’, ২০০৮ সালে ‘সমুদ্রগামী মৎস্যজীবীদের জীবন জীবিকা’ এবং ২০০৪ সালে ‘উপকূলীয় জেলা বরগুনায় তৃণমূলস্তরের নারীর ক্ষমতায়নে ইউপি নারী সদস্যদের ভূমিকা’ বিষয়ে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া বরগুনা জেলা পর্যায়ে টোটাল লিটারেসি মুভমেন্ট (টিএলএম), বেড়িবাঁধে রুটিন মেইনটেন্যান্স কর্মসূচি (আরএমপি) ও ইউনিসেফের ওরাল রিহাইড্রেশন থেরাপি (ওআরটি) বিষয়ে প্রভাব যাচাই গবেষণা করেছেন।

ফেলোশিপ : রফিকুল ইসলাম মন্টু ‘উপকূলীয় এলাকায় সর্বজনীন সম্পদ ব্যবহার’ বিষয়ে সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি)’র অধীনে ফেলোশিপ সম্পন্ন করেছেন ১৯৯৩ সালে।

কর্মরত গণমাধ্যম : রফিকুল ইসলাম মন্টু ২০০২ সাল থেকে ঢাকায় কেন্দ্রীয় সাংবাদিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি ১৯৮৪ সালে নিজ জেলা বরগুনা থেকে। ঢাকায় পলিটিক্যাল বিট, নির্বাচন কমিশন বিট ও জেনারেল বিটে কাজ করেছেন। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডটকম-এ। সিনিয়র রিপোর্টার হিসাবে কাজ করেছেন প্রথম আলো, কালের কণ্ঠ, সমকাল ও আলোকিত বাংলাদেশ-এ। জুনিয়র রিপোর্টার হিসেবে ছিলেন সংবাদ, ভোরের কাগজ ও মানবজমিনে। ঢাকার বাইরে বরগুনা ব্যুরো প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন বাংলাবাজার পত্রিকায়। স্থানীয় দৈনিক আজকের কণ্ঠ ও সাপ্তাহিক বরগুনা কণ্ঠ পত্রিকায় বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়া জেলা প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেন বার্তা সংস্থা ইউএনবি, দৈনিক জনতা, ডেইলি ইনডিপেনডেন্ট, দৈনিক দেশ, বাংলাদেশ টাইমস, দৈনিক নব অভিযান এবং সাপ্তাহিক নব অভিযান-এ।

 






উত্তর দিন

Your email address will not be published. Required fields are marked as *

*