বাংলাদেশ বিমান না হলে আমার অসুস্থ ছেলেকে দেশে আনতে পারতাম না
ফেসবুক কর্নার।।
মোহাম্মদ শওকত । অসাধারণ মেধাবী ছাত্র । উচ্চ শিক্ষার জন্য বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে ২০১৯ সালে কানাডার টরোন্ট শহরের নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বেশ ভালই ছিল তার শুরুটা । কিন্তু ২০২১ সালে তিনি মারাত্বক অসুস্থ হয়ে পড়েন । বন্ধুদের সাহায্য সহায়তায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হলে নিবিড় পরিচর্যায় দীর্ঘ চিকিৎসা চলে।
প্রবাস জীবনের বাস্তবতার ব্যস্ততায় আস্তে আস্তে কেউ আর অচেতন শওকতের পাশে রইল না! ১৩ হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশে বসে জায়নামাজে হতভাগী মায়ের প্রার্থনা – কান্না ! একবার যদি সে তাঁর আদরের সন্তানের মুখখানা দেখতে পারত ! মায়ের দু:খ সইতে না পেরে তার বাবা বহুকষ্টে দীর্ঘচেষ্টায় কানাডার ভিসা সংগ্রহ করে ছুটে যায় টরোন্ট শহরে ।
নিথর দেহ পড়ে আছে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ! ছেলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয় ! বাবাকে চিনতে পারে না ! বাবার কান্নায় হাসপাতালের পরিবেশ ভাড়ি হয়ে যায়! দু:খী বাবা সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর ছেলেকে সে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনবে । কিন্তু চাইলেই কি পারা যায় ! বাংলাদেশে আগত সকল বিদেশী এয়ারলাইন্সের দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা ধরে আকুতি মিনতি করেন ।
কিন্তু কোন এয়ারলাইন্সই তার ছেলেকে বাংলাদেশে আনতে রাজি হয়নি। আশাহত বাবা একবুক পাথরচাপা ব্যথা নিয়ে তাঁর আদরের সন্তানকে হাসপাতালে রেখেই ফিরে আসে বাংলাদেশে । হয়তো আর কোন দিন দেখা হবে না এ জনমে! হাসপাতালই হয়ে যায় সন্তানের শেষ ঠিকানা ! কোন দিন সে আর ফিরবে না নিজের দেশে , মায়ের কাছে ! শওকতের মা-বাবা টেলিভিশনে খবর দেখেছে – বাংলাদেশ বিমান যাবে কানাডা ।
আটলান্টিকের নোনা জল হেরে যায় মায়ের চোখের জলে ! আশায় বুক বাঁধে ! অপেক্ষা আর শেষ হয় না । অবশেষে গত ২৭ জুলাই শুরু হয় বিমান চলাচল । বাবা আবার ছুটে যায় কানাডা ! ছেলেকে আনতেই হবে দেশে! বাংলাদেশ বিমানতো শুধু লাভের নেশায় ব্যবসা করে না।বাংলাদেশ বিমান মানবতা বিবেচনা করে , সে জাতীয় দায়িত্ব পালন করে । অসহায় শিক্ষার্থী শওকতের পাশে দাঁড়ায় বাংলাদেশ বিমান।
আজ ৪ আগষ্ট দেড় বছর যাবত হাসপাতালের বেডে পড়ে থাকা অসুস্থ শওকতকে উড়োজাহাজে ‘ষ্ট্রেচার বেডে’ দেশে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ বিমান। কিছুক্ষন আগে তার বাবাকে ফোন করে জানতে চাইলাম ঠিকমতো বাসায় পৌঁছেছেন কিনা ! কেঁদে কেঁদে বললেন , “বাংলাদেশ বিমান না থাকলে আমি আমার ছেলেকে দেশে আনতে পারতাম না ! বিমানের এ ঋণ কোন দিন শোধ করতে পারব না ! ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ বিমান কে , ধন্যবাদ জানাই বঙ্গবন্ধু কন্যাকে , সে না থাকলে বিমান কানাডা যাইত না ! আমার ছেলেকেও হয়ত আর পাইতাম না ! “ দোয়া করি প্রতিশ্রুতিবান এ তরুন মেধাবী ছাত্র শওকত সুস্থ হয়ে আবার ফিরে যাবে কানাডা । তাঁর অসমাপ্ত শিক্ষা সমাপ্ত করে মা বাবার মুখে হাসি ফোটাবে , দেশের জন্য কাজ করবে ।
ভ্রমন করবে সে নিজের টাকায় , নিজের দেশের বিমান সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে॥####
লেখকঃ
মশিকুর রহমান,
স্টেশন ম্যানেজার
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, টরেন্টো।