আমার কালো মুখটারে অহেতুক ফর্সা করে
“মুখোশের দিনলিপি-১” ‘জীবন থেকে নেয়া,লিখেছেন দেবদাস মজুমদার
উপকূলের মানুষ। নদীতে ভেসে ভেসে ঢাকায় আসছি। ক্যামেরা, ছবি আর ফ্লিম নিয়া একটু লেখাপড়া করতে। বিপত্তি হলো আজব শহরে অচেনা মানুষ, ধূলাবালি শব্দ, লিফটের আটতলায় ওঠা ঘুম। খাবার দাবার আমার প্রাত্যহিক জীবনে মানান সই না।
পাসপোর্ট সাইজ ছবি আমার নাই। তুলতে গেলাম নীলক্ষেতের একটা স্টুডিওতে। ফটোগ্রাফার খালি দুইহাত দিয়া আমার ঘাড়টারে ঘুরায়।বলি ভাই আমি কি ঘাড় ত্যাড়া। সে হাসতে হাসতে আমার কালো বদনের ফটো তোলে। তারপর আমার ছবিখানা কম্পিউটারে ঢুকায় । ঘসামাজা করে।
আমার কালো মুখটারে অহেতুক ফর্সা করে। চার কপি পাসপোর্ট আর চার কপি স্টাম্প সাইজ ছবি প্রিন্ট করে খামে ভরে ২০০ টাকা হাতিয়ে নেয়।
আমি মুখোশ লাগিয়ে ধূলা মাড়িয়ে হেঁটে যাই। এই শহরটায় আমি এখন এক মুখোশধারী মানুষ। শ্বাস প্রশ্বাস আছে কিনা মাঝে মাঝে নাকে হাত দিয়ে পরীক্ষা করি।
পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা দেই ছবির এক স্কুলে। ছবি দেখে অফিসের ভদ্রলোক আমার দিকে তাকায় আর বলে,
আপনি কি আসল দেবদাস?
আমি বলি কেন ভাই?
ভদ্রলোক আলতো হেসে বলেন, না মানে আপনার বাবার নাম দেখছি শরৎ চন্দ্র।
আমি বলি, আসল কিনা জানিনা তবে আমি নকল মানুষ না।
ভদ্রলোক হেসে ওঠেন।
আমি ছবির ক্লাস রুমে ঢুকে দেখি আমার রোল নম্বর ১। লেখাপড়া নাই পরীক্ষা দিলাম না। রোল নম্ব ১ হয় কেমনে? ছবির ক্লাসে দেখি সব অচেনা মুখ।
ছবির প্রথম পাঠ নিতে নিতে রাত নয়টা। আমি ৩০ টাকায় কেনা মুখোশটা লাগিয়ে ফুটপাত দিয়ে মোহাম্মদপুরের দিকে হাঁটতে থাকি। আর ভাবি ওহ এই মুখোশের শহরে আল্লাহর আরও ৩০টা দিন আমি কেন থাকবো!(চলবে)
(পরবর্তী খবর) চিতলমারী সেটেলমেন্ট অফিসে চরম জনবল সংকট »