ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে পছন্দের প্রর্থীদের ভোট দেয়ার জন্য অন্য ভোটারদোর চাঁপ প্রয়োগ
শরণখোলায় আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ
আলোরকোল ডেস্ক ।।
শরণখোলায় আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভোটারদের হুমকি ও তার পছন্দের প্রর্থীদের ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদোর চাঁপ প্রয়োগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে । জানা গেছে , ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার পরে প্রায় দুই যুগ অতিবাহিত হলেও আজ অবধি প্রত্যক্ষ ভোটে ম্যানেজিং কমিটি না হওয়ায় অভিভাবক ও এলাকা বাসির ক্ষুব্ধ। প্রধান শিক্ষকের অত্যন্ত সুকৌশলে ৪জন অভিভাবককে সদস্য পদপ্রার্থী দেখিয়ে বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত দেখানো হয় গত এক যুগ ধরে। কিন্তু আগামী ২০ আগস্ট (মঙ্গলবার) নির্বাচনের দিন ধার্য করে তফসিল ঘোষণার পরে সর্বমোট সাত জন অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী মনোনয়ন পত্র জমা দেন । যাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিজের পছন্দের চার জনকে মনোনীত করে মনোনয়ন পত্র জমা দেন এবং বাকী তিনজন ও মনোনয়ন পত্র জমা দিলে প্রধাান শিক্ষক তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে
প্রধান শিক্ষকের মনোনিত ৪ জন প্রার্থীর নাম কাগজে হাতে লিখে শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচার করা হয় ।তারই একটি অংশ ।
তাদেরকে নানাভাবে হুমকি দেন ,যাতে তারা তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন। অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী মো. মিজানুর রহমান কে প্রধান শিক্ষক নিজে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করার জন্য বলেন এবং মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার না করলে উক্ত প্রার্থীর আত্বীয় অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও ছাত্র কেবিনেটের সভাপতি মোঃ আবু রায়হানকে টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ন না করার ভয় দেখান। অন্য এক অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী মো. মজিবর মোল্লা প্রার্থী হওয়ায় তার ছোট ভাই অত্র বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক মোঃ অলিউল্লাহকে চাকুরীচ্যুত করার ভয় দেখান বলে অভিযোগ রয়েছে ।
এব্যাপারে অত্র বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শিক্ষক মোঃ অলিউল্লাহ-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। অন্যদিকে ,অপর এক অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর হাওলাদারকে ও প্রধান শিক্ষক ডেকে এনে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করার জন্য চাঁপদেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান । প্রার্থী মিজানুর রহমান,মজিবর মোল্লাও জাহাঙ্গীর হাওলাদার তাদের সিদ্ধন্তে অনঢ় থাকায় প্রধান শিক্ষক তাদের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করাতে ব্যর্থ হয় এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ভিন্ন অপকৌশল অবলম্বন করেন। অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী মোঃ মজিবর মোল্লার ৮ম শ্রেনিতে পড়ুয়া মেয়ে মোমেনা আক্তার এবং প্রার্থী মো. মিজানুর রহমানের মেয়ে লামিয়াকে গত ৭ আগস্ট বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের একটি হলরুমে ডেকে উক্ত দুই শিক্ষার্থীদের অত্র রুম থেকে বের করে দিয়ে কেবলমাত্র প্রধান শিক্ষকের মনোনীত ৪ প্রার্থীদের নাম বিদ্যালয়ের অফিস সহকারীর নিজ হাতে লেখা তালিকা ধরে ভোট চেয়ে প্রচারনা করানো হয়। সকলের সামনে হল রুম থেকে বের করে দেয়ায় উক্ত শিক্ষার্থীরা মানুষিকভাবে মারাত্বকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে এবং বিদ্যালয়ে ও বাসায় এসে অনেক কান্নাকাটি করেছে।
এব্যাপারে অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী মোঃ মজিবর মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন যে “মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারে জন্য প্রধান শিক্ষক আমাকে বিভিন্নভাবে চাপ দিয়েছেন। বিদ্যালয়ে আমার মেয়েকে রুম থেকে বের করে দিয়ে কতিপয় প্রার্থীর পক্ষে প্ররাচনা চালানো ঠিক হয় নি। রুম থেকে বের করে দেয়ায় আমার মেয়ে বাসায় এসে অনেক কান্নাকাটি করেছে ও মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। একজন শিক্ষার্থীর সাথে এ রকমের আচরণ কাম্য নয়। আমি ইহার তীব্র নিন্দা জানাই। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকদের অনৈতিক এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড না করার আহবান জানাই”।
প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন , আমার মেয়েকে কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে অন্য কতিপয় প্রার্থীর পক্ষে প্রধান শিক্ষক আবজাল হেসেন মানিক প্রচারনা চালিয়েছে। একজন শিক্ষার্থীর সাথে এ রকমের আচরণ মেনে নেয়া যায় না কারন ইহা আমার মেয়ের জন্য মানুষিক পীড়াদায়ক। আমি ইহার নিন্দা জানাই । বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি দূরে অবস্থান করায় প্রধান শিক্ষক নিজের ইচ্ছামত বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকেন। তাই, প্রধান শিক্ষকের ভয় যে তার পছন্দের প্রার্থীর বাইরে কেউ যদি নির্বাচিত হয় তাহলে তিনি আর স্বেছাচারভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা করতে পারবেন না।
সভাপতি তার কর্মব্যস্থতার কারনে সাধারণত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভায় অংশগ্রহণ করতে না পারায় প্রধান শিক্ষক ইহাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে থাকেন মর্মে জনশ্রুতি আছে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির আসন্ন নির্বাচন নিয়ে অত্র প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কমিটির সদস্য মোঃ মোস্তফা জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , আমি জানতে পেরেছি প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে বলেছেন যে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কে হবেন তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয় নির্ধারন করে দিয়েছেন এবং বিদ্যালয়ের নির্বাচন সহ সকল কিছু জেলা প্রশাসক মহোদয় নিয়ন্ত্রন করেন। তবে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মহোদয় সভাপতি হবেন ইহা সর্বজনবিধিত এবং ইহার কোন বিকল্প নেই ।
তিনি আরো বলেন ,প্রধান শিক্ষকের ভাষ্য অনুযায়ী যদি জেলা প্রশাসক মহোদয় নির্বাচন নিয়ন্ত্রন করান তাহলে সাধারন অভিভাবক সদস্য প্রার্থীদের নির্বাচনের অংশগ্রহন কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে তা একটি মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন ?আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবজাল হোসেন মানিক বলেন , আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয় । কোন ভোটার বা প্রার্থীকে হুমকি দেয়ার প্রশ্নই উঠেনা ।প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন নিয়ম অনুসারেই হবে ।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান খান বলেন ,
আনোয়ার হোসেন মাধ্যমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবজাল হোসেন মানিকের বিরুদ্ধে আমার কাছে প্রার্থীরা একাধিক অভিযোগ করেছেন এবং আমি বিষয়িটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি । যাতে সুষ্ঠভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয় আমরা সে ব্যাবস্থা নিবো ।
« মোড়েলগঞ্জে প্রথম ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত (আগের খবর)
(পরবর্তী খবর) ভাষা শহীদদের স্মরণে – কবিতা »