শিক্ষকের পিটুনিতে আহত
শরণখোলায় জান্নাতুল মাওয়ার স্কুলে যাওয়া বন্ধ
আলোরকোল ডেস্ক ।।
বাগেরহাটের শরণখোলায় শিক্ষকের পিটুনিতে গুরুত্বর আহত সেই ছাত্রীর এখন স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া সহ অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ এবং স্থানীয় সমাজ পতিরা আহত ছাত্রীর পরিবারকে আশ্বাসের নানা ফুলঝুরি দিলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তা এখন অষ্টরম্বায় পরিনত হয়েছে। এছাড়া উল্টো ওই ছাত্রীর চারিত্রিক দিক নিয়ে অপবাদ ছড়াতে শুরু করেছে একটি স্বার্থেনেষি মহল। যার ফলে উভয় সংকটের মধ্যে পড়েছে আহত ছাত্রীর পরিবার।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, গত ১৯ মার্চ উপজেলার দক্ষিণ তাফালবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় তাফালবাড়ী বাজারের ক্ষুদে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর খানের মেয়ে এবং তাফালবাড়ী স্কুল এন্ড কলেজের নবম শ্রেনীর ছাত্রী জান্নাতুল মাওয়া (১৪) সহ ২ বান্ধবীকে বেধাড়ক পিটুনি দেন ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শহিদুল ইসলাম শহীদ। গুরুত্বর আহত অবস্থায় মাওয়াকে উদ্ধার করে একই দিন বিকেলে শরণখোলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কলেজের অধ্যক্ষ মানিক চাঁদ রায় হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে যোগসাজশ করে মাওয়ার ভর্তি বাতিল করে দেন। পরে ওই ছাত্রী পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্ত কলেজের অধ্যক্ষ ও অভিযুক্ত শিক্ষকের যোগসাজশের কারনে সেখানে মাওয়ার চিকিৎসা করাতে ব্যর্থ হয় তার পরিবার। কোন উপায় না পেয়ে পরে খুলনা ইসলামী ব্যাংক প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওই ছাত্রীকে। আহত ছাত্রীর পিতা জাহাঙ্গীর খান, সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার দিন সকালে তার মেয়ে সহ ২ ছাত্রী বিদ্যালয়ের জাতীয় সংগীতে (পিটিতে) অংশ নিতে দেরী করায় ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শহীদ জোড়া বেত দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়ে তাদেরকে আহত করেন। এতে মাওয়ার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে গুরুত্বর আঘাত লাগলে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে বিষয়টি জানতে জাহাঙ্গীর স্কুলে গেলে ওই শিক্ষক তাকেও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করেন। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, থানা পুলিশ সহ স্থানীয় কতিপয় সমাজ পতিদের অবহিত করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি কেউ। বিষয়টি সুষ্ঠ সমাধানের জন্য ওই সময় অনেকেই নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযুক্ত শিক্ষক শহীদ রয়েছে বহাল তবিয়তে এবং মেয়েটির স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচের পাশাপাশি দীর্ঘদিন দোকান বন্ধ থাকায় বহু ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন জাহাঙ্গীর। এমনকি তার মেয়ের চরিত্র ভালো নয় বলে ওই শিক্ষকের ইন্দনে নানা অপবাদ ছড়াতে শুরু করেছে একটি মহল। ঘটনার পর বিষয়টি স্থানীয় থানা পুলিশকে অবহিত করা হলেও এ পর্যন্ত কোন সহযোগীতা পাননি তিনি। জাহাঙ্গীরে স্ত্রী এলাচি বেগম বলেন, মেয়েকে নিয়ে আমরা নাকি নাটক করছি। মাওয়া মারপিটে আহত হয়নি, সে নাকি এ্যাজমা রোগে আক্রান্ত, এখন তার মেয়ের বিরুদ্ধে এমন গুজব রটাচ্ছে প্রতিপক্ষরা। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে স্কুল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হচ্ছে। মাওয়া বলেন, তিনি এখন আর আগের মতো পড়ার টেবিলে বসতে পারছেন না। কিছু সময় বসলে চোঁখে ঝাঁপসা দেখেন। এছাড়া বাম পাজরে এখনও ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। যে কারনে স্কুলের অভ্যন্তরীন পরিক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। অসুস্থতার কারনে ভবিষ্যতে আর স্কুলে যেতে পারবেন কিনা তাও জানেন না মাওয়া। এ বিষয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মানিক চাঁদ রায় বলেন, মাওয়ার অভিভাবকের পক্ষ থেকে তার কাছে লিখিত আবেদন করলে বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখতে পারেন। এছাড়া ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার তার নাই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুজ্জামান খান বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন এবং ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের কাছে জানতে চেয়ে টেলিফোন করেছেন। ঘটনাটি নাকি ষড়যন্ত্রমুলক এবং ইতিমধ্যে তা নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে তাকে অবহিত করা হয়েছে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ হাসানুজ্জামান পারভেজ বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এটা অত্যান্ত ন্যাককার জনক ঘটনা। ম্যানেজিং কমিটি এত দিনে বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে থাকলে অভিযুক্ত শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীর অভিভাকদের আইনগত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। অপরদিকে, শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দিলীপ কুমার সরকার জানান, ঘটনাটি তিনি জানেন না তবে শিক্ষার্থীর পক্ষে অভিযোগ পেলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ###
( সংবাদটি শেয়ার করুন )